‘আওয়ামী লীগের দোসর’ তালিকা প্রকাশ, ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি

0
6

নিজস্ব প্রতিবেদক: সচিবালয়ে কর্মরত আওয়ামী লীগের দোসরদের আগামী ৩১ মের মধ্যে চাকরিচ্যুতিসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে জুলাই আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্য’। দাবি বাস্তবায়ন না হলে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্ল্যাটফর্মটির সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ।

মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সচিবালয়ে ও প্রশাসনে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসরদের তালিকা প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।এ সময় সচিবালয়ে কর্মরত ৪৪ জন আমলার তালিকা এবং প্রশাসনের ৫০ জনের মতো কর্মকর্তার তালিকা প্রকাশ করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।

লিখিত বক্তব্যে জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, ‘গত ১০ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিকে সামনে রেখে গত ৬ মে ৩৫টি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে জুলাই ঐক্যের আত্মপ্রকাশ হয়। বর্তমান ৮০টি সংগঠন জুলাই ঐক্যের শক্তি। আমাদের আত্মপ্রকাশের পর থেকে আওয়ামী নিষিদ্ধের দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে জুলাই ঐক্য। সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেভাবে নিষিদ্ধ করেছে তা আমরা পুরোপুরি গ্রহণ করিনি। তারপর সরকারকে আমরা এই উদ্যোগের জন্য স্বাগত জানিয়েছি।’

এই সংগঠক বলেন, ‘সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে যে গ্যাজেট প্রকাশ করেছে সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম এবং ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ সরকার নেয়নি। গ্যাজেট অনুযায়ী ১৪ দলের শরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। জুলাই আগস্টে শুধু নয় গত সাড়ে ১৫ বছর সচিবালয়ের আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেভাবে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছিল তারা এখনো সচিবালয়সহ বিভিন্ন স্থান নিয়ন্ত্রণ করছে।’

তিনি বলেন, ‘দুই হাজার প্রাণ ও ৩১ হাজার আহত ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার পেলেও আমাদের ব্যর্থতা বিপ্লবী সরকার গঠন করতে না পারা। যে সুযোগটি নিয়েছে আওয়ামী লীগের দোসররা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন সহযোগিতা করছে কিছু আমলা ও প্রশাসনে থাকা কর্মকর্তারা। আমরা দেখেছি একদিন আগেও ঢাকার একাধিক স্থানে মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রশাসন যদি সবর থাকত তাহলে তারা এই মিছিল করতে সাহস পেত না। এখনো আওয়ামী লীগের অনেক এমপি মন্ত্রী দেশে আছে। সরকারের সেই আমলারাই তাদের সেফ এক্সিট দিচ্ছে। সর্বশেষ আব্দুল হামিদ তার প্রমাণ।’

মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘আমরা অনেক ধৈর্য ধারণ করেছি। আমরা দেখছি জুলাইয়ের শক্তিগুলোকে কীভাবে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আমরা জুলাইয় ধারণ করে এখন পর্যন্ত বেঁচে আছি। আমাদের বেঁচে থাকার একটাই উদ্দেশ্য, জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখা। জুলাই না বাঁচলে আমরাও বাঁচব না। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই জুলাইয়ের শক্তিদের নিয়ে আমাদের জুলাই ঐক্য। আমরা আজকে সচিবালসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং জুলাই আগস্টের আন্দোলনের সময় যে সব ম্যাজিস্ট্রেট ছাত্র জনতার বুকে গুলি করেছে রক্তাক্ত করেছে আমার জন্মভূমি। আমরা তাদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করেছি। এটা প্রাথমিক তালিকা। আমরা খুব শিগগিরই আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল সেক্টরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের তালিকা প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

পরবর্তী পদক্ষেপ তুলে ধরে জুলাই ঐক্যের সংগঠক এবি জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কালচারাল ফ্যাসিস্ট, শিক্ষাঙ্গন, চিকিৎসাঙ্গন, আইনাঙ্গন এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সেক্টরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের তালিকা প্রকাশ।’

সরকারের কাছে দাবিগুলো হচ্ছে-

১। আগামী ৩১ মে এর মধ্যে তালিকায় উল্লিখিত সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগের দোসরদের বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে।

২। তিন সরকারি কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেশের জনগণকে দেখাতে হবে৷

৪। দেশের তথ্য পাচারকারী ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানো, নির্দেশকারী এবং সহযোগিতাকারী সকল আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবারসহ সকলের ব্যাংক হিসাব ও অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে।

৫। স্বৈরাচারের দোসর আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৬। আগামী ৩৬ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সকল স্বৈরাচারের দোসরদের শ্বেতপত্র সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

৭। আইনের ১৩২ ধারার কারণে থানায় খুনি পুলিশদের নামে মামলা নেওয়া হয় না। আগামী ৩১ মে ২০২৫ এর মধ্যে এই ধারা বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে।

৮। আগামী ৩১ মে এর মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তারা এখন কোথায় আছে এবং কত জন কার সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছে তাদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY