আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। তার কার্যালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ক্যানসারটি ইতিমধ্যে তার হাড়েও ছড়িয়ে পড়েছে। খবর বিবিসির।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৮২ বছর বয়সী বাইডেন গত সপ্তাহে প্রস্রাবজনিত সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। এরপর শুক্রবার (১৬ মে) তার প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। ক্যানসারটি বেশ আক্রমণাত্মক ধরনের, এবং তার গ্লিসন স্কোর ১০ এর মধ্যে ৯ — যা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয়।
যুক্তরাজ্যের ক্যানসার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানসার রিসার্চ ইউকে-এর মতে, এই ধরনের গ্লিসন স্কোর বিশিষ্ট ক্যানসারকে ‘হাই গ্রেড’ বা উচ্চ মাত্রার ক্যানসার হিসেবে ধরা হয়, যা দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গ্লিসন স্কোর সাধারণত প্রোস্টেট ক্যানসারের কোষের গঠন, বিস্তার এবং কতটা আগ্রাসী সে বিষয়ে ধারণা দেয়।
বাইডেনের কার্যালয় আরও জানায়, ক্যানসারটি হরমোন-সংবেদনশীল হওয়ায় চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতে পারে। এ অবস্থায় তিনি ও তার পরিবার বিভিন্ন চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা করছেন।
এই খবর প্রকাশের পর ডেমোক্রেটিক পার্টি ও প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির নেতারা বাইডেনের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী মেলানিয়া বাইডেনের অসুস্থতার খবর শুনে অত্যন্ত ব্যথিত। তিনি বাইডেনের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
ডেমোক্রেট প্রতিনিধি রো খান্না এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, ‘জো ও জিল সব সময় সংগ্রাম করেছেন। আমি নিশ্চিত, তারা সাহস ও মর্যাদার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জও জয় করবেন।’
এর আগে ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন বাইডেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়সী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যমতে, ত্বকের ক্যানসারের পর যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় প্রোস্টেট ক্যানসার। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে অন্তত ১৩ জন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ে।
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বাইডেন বেশিরভাগ সময় জনসম্মুখে আসেননি। তবে কয়েকটি নির্বাচিত অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হন। এপ্রিল মাসে তিনি শিকাগোতে একটি সম্মেলনে বক্তৃতা দেন এবং মে মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে ‘কঠিন’ বলে স্বীকার করেন।
মে মাসেই ‘দ্য ভিউ’ নামের এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার অভিযোগ নাকচ করে বলেন, এ ধরনের কোনো প্রমাণ নেই।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বাইডেন দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসার গবেষণার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। ২০২২ সালে তিনি ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন ‘ক্যানসার মুনশট’ নামের একটি প্রকল্প পুনরায় চালু করেন, যার লক্ষ্য ২০৪৭ সালের মধ্যে ক্যানসারজনিত মৃত্যু ৪০ লাখ কমিয়ে আনা।
বাইডেনের বড় ছেলে বাউ বাইডেন ২০১৫ সালে মস্তিষ্কের ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন, যা বাইডেন পরিবারকে ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতন ও সক্রিয় করেছিল।